ঢাকা, সোমবার   ২১ এপ্রিল ২০২৫

Ekushey Television Ltd.

মৃত্যুকে করি স্মরণ

একুশে টেলিভিশন

প্রকাশিত : ১২:৪৮, ২৩ জুলাই ২০২১

Ekushey Television Ltd.

মৃত্যু নিশ্চিত তাতে কোন সন্দেহ নেই। অথচ অধিকাংশ মানুষ এ বিষয়ে উদাসীন। একজন মুসলিমের করণীয় হল, মৃত্যুর কথা বেশী বেশী স্মরণ করা এবং তার জন্য সর্বদা প্রস্তুত থাকা। অনুরুপ ভাবে দুনিয়াতে থাকতে সময় ফুরিয়ে যাওয়ার পূর্বেই পরপারের পাথেয় সঞ্চয় করা।

মনে রাখতে হবে, প্রতিটি মানুষ মরণশীল। ক্ষণস্থায়ী পৃথিবীতে স্থায়ী নয় কেউ-ই। দুনিয়ার টাকা-পয়সা, ধন-সম্পদ, পরিবার-পরিজন, বন্ধু-বান্ধব সবাইকে ছেড়ে একদিন পাড়ি জমাতে হবে ওপাড়ে। যেখানে বন্ধু হবে না কেউ, হবে না শত্রুও। নিজেকেই নিজের দায়িত্ব নিতে হবে।

ইসলাম মানুষের মৃত্যুচিন্তা বদলে দিয়েছে। আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) বলতেন, ‘যখন সন্ধ্যায় উপনীত হবে তখন সকালের জন্য অপেক্ষা কোরো না, আর যখন তোমার সকাল হয় তখন সন্ধ্যার জন্য অপেক্ষা কোরো না। অসুস্থ হওয়ার আগে তোমার সুস্থতাকে কাজে লাগাও আর তোমার মৃত্যুর জন্য জীবিতাবস্থায় পাথেয় জোগাড় করে নাও।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬৪১৬)

মৃত্যু অনিবার্য তবে কাম্য নয়
জীবমাত্রই মৃত্যু অনিবার্য। আল্লাহ তা’আলা বলেন, ‘তোমরা যেখানেই থাকো না কেন মৃত্যু তোমাদের স্পর্শ করবেই।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ৭৮)

তবে ইসলাম মৃত্যু কামনাকে বৈধ মনে করে না। নবী করিম (সা.) বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যেন কিছুতেই মৃত্যু কামনা না করে এবং মৃত্যু আসার আগে তার জন্য দোয়াও না করে। কেননা যখন তোমাদের কেউ মারা যায় তখন তার আমল বন্ধ হয়ে যায়। আর মু’মিনের দীর্ঘ জীবন শুধু তার জন্য কল্যাণই বয়ে আনে।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৯৯৫)

একইভাবে ইসলাম আত্মহত্যা নিষিদ্ধ করেছে। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘যে পাহাড়ের ওপর থেকে লাফিয়ে পড়ে আত্মহত্যা করে, সে জাহান্নামের আগুনে পুড়বে, চিরকাল সে জাহান্নামের ভেতর সেভাবে লাফিয়ে পড়তে থাকবে। যে বিষপানে আত্মহত্যা করবে, তার বিষ জাহান্নামের আগুনের মধ্যে তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে জাহান্নামের মধ্যে তা পান করতে থাকবে। যে লোহার আঘাতে আত্মহত্যা করবে, জাহান্নামের আগুনে সে লোহা তার হাতে থাকবে, চিরকাল সে তা দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করতে থাকবে।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৫৭৭৮)

মৃত্যুর ভয় নয়, মৃত্যুর স্মরণ 
ইসলাম মৃত্যুকে ভয় না করে, মৃত্যুর স্মরণ ও পরবর্তী জীবনের পরিণতি চিন্তা করতে উদ্বুদ্ধ করেছে এবং সেসব মানুষের নিন্দা করেছে যারা মনে করে মৃত্যুর পর আর কোনো জীবন নেই। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা জীবনের স্বাদ ধ্বংসকারী (মৃত্যু)-কে বেশি পরিমাণে স্মরণ করো।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ২৩০৬)

মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদের যে জীবিকা দিয়েছি তা থেকে দান করবে তোমাদের কারো মৃত্যু আসার আগে। অন্যথায় মৃত্যু এলে সে বলবে, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে আরো কিছুকালের জন্য অবকাশ দিলে দান করতাম এবং সৎকর্মপরায়ণদের অন্তর্ভুক্ত হতাম।’ (সুরা মুনাফিকুন, আয়াত : ১০)

মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকে মু’মিন
মৃত্যু যেমন অপরিহার্য, তেমন অনিশ্চিত তার সময়কাল। কেউ জানে না কখন তার মৃত্যু হবে। তাই মুমিন মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকে সব সময়। পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘কেউ জানে না সে আগামীকাল কী উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না তার মৃত্যু কোথায় ঘটবে।’ (সুরা লোকমান, আয়াত : ৩৪) 

আল্লামা ইবনে রজব (রহ.) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেন, মানুষের প্রতিটি মুহূর্ত; প্রতিটি প্রাণীর প্রতিটি মুহূর্ত যেন তার মৃত্যুর মুহূর্ত। এ জন্য রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেন, ‘হে তারিক! মৃত্যু আসার আগেই মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত হও।’ (আল-মুস্তাদরিক আলাস সাহিহাইন, হাদিস: ৮৯৪৯)

মু’মিনের মৃত্যুর প্রস্তুতি
এক আরব কবি বলেছেন, জীবন সে কয়েকটি চোখের পলকের নাম। অর্থাৎ জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত সময়কালই জীবন। তাই সময়ের সর্বোচ্চ ব্যবহার করে মুমিন মৃত্যু ও মৃত্যু-পরবর্তী জীবনের জন্য প্রস্তুতি নেবে। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা পাঁচ জিনিসকে পাঁচ জিনিসের আগে গনিমত (সম্পদ) মনে করো : ১. যৌবনকে বার্ধক্যের আগে, ২. সুস্থতাকে অসুস্থতার আগে, ৩. সচ্ছলতাকে অভাবের আগে, ৪. অবসরকে ব্যস্ততার আগে, ৫. জীবনকে মৃত্যু আসার আগে।’ (মুস্তাদরিকে হাকিম, হাদিস: ৭৮৪৬)

ভালো কাজ করা
মৃত্যুর প্রধান প্রস্তুতি হলো নিজেকে ভালো কাজে নিয়োজিত করা এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখা। মহানবী (সা.) বলেন, ‘তোমরা নেক আমলের দিকে দ্রুত অগ্রসর হও ঘুটঘুটে অন্ধকার রাতের অংশ সদৃশ ফেতনায় পতিত হওয়ার আগেই।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস: ৩২৮)

পাপ কাজ পরিহার
পাপ পরিহারের মাধ্যমে মুমিন মৃত্যুর জন্য প্রস্তুত থাকে। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য সব ধরনের পাপ নিষিদ্ধ করেছেন। ইরশাদ হয়েছে, ‘বলুন! আমার প্রতিপালক নিষিদ্ধ করেছেন প্রকাশ্য ও গোপন অশ্লীলতা আর পাপ।’ (সুরা আরাফ, আয়াত : ৩৩)

অতীত পাপের জন্য তাওবা
মু’মিন অতীত ভুলত্রুটি ও পাপের জন্য তাওবা করার মাধ্যমে ক্ষমা প্রার্থনা করবে। পবিত্র কোরআনে মৃত্যুর আগে তাওবা না করাকে ‘জুলুম’ আখ্যা দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, ‘যারা তাওবা করে না, তারা অবিচারকারী।’ (সুরা হুজরাত, আয়াত : ১১)

অসিয়ত করা
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে মুসলিমের অসিয়তযোগ্য কিছু সম্পদ আছে তার উচিত নয় সে দুই রাত কাটাবে অথচ তার কাছে তার অসিয়ত লিখিত থাকবে না।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস : ২৭৩৮)

সুন্দর মৃত্যুর কামনা
রাসুলুল্লাহ (সা.) চাপা পড়ে, গর্তে পড়ে, পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে ও বিষাক্ত প্রাণীর দংশনে মারা যাওয়া থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় কামনা করতেন। (সুনানে আবি দাউদ, হাদিস: ১৫৫২)
এসএ/


 


Ekushey Television Ltd.

© ২০২৫ সর্বস্বত্ব ® সংরক্ষিত। একুশে-টেলিভিশন | এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার বেআইনি